আজ সোমবার, ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাতের আধারে র‌্যাব- ১১ (ভিডিও সহ)

চারদিকে তখন রাতের অন্ধকার। এরই মধ্যে বাড়ির গেটে টোকা, র‌্যাবের সদস্যদের হাকডাক। ভেতরে থাকা লোকজনের কিন্তু ভয় পাওয়ার কথা তবে গেট খুলতেই চোখ ছানাবড়া তাদের।
কালো পোশাক পরা র‌্যাব-১১ এর সদস্যদের হাতে থাকা সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় করে চাল-ডাল, তেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। লকডাউনে থাকা কর্মহীন মানুষের জন্য তারা খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি। যা দেখে যারপরনাই খুশী মানুষ। একজন পঙ্গু মানুষকে দেখা গেলো ক্রেচে ভর দিয়ে আসতে। এক নারী ত্রাণের বস্তা নিলো আঁচলে মুখ ঢেকে। আনন্দে না কষ্টে তা না বুঝা গেলেও বিষ্ময় ছিলো চোখে মুখে।
কথা হয় হালিমা বেগম নামের এক ষাটোর্ধ নারীর সাথে। তিনি জানান, তার স্বামী মারা গেছে সেই কবে। একমাত্র ছেলের হকারি ব্যবসার আয়েই চলে সংসার। পরিবারে ছেলের বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে ৫ জন সদস্য। একটানা অনেক দিন বাইরে যেতে না পারায় জমানো টাকা আর বাড়িতে থাকা খাদ্যপণ্য ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। লজ্জায় কারও কাছে তা প্রকাশ করতেও পারছিলেন না। এ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। এরই মধ্যে ঘরে থেকেই র‌্যাবের খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুব খুশি হালিমা বেগম। দোয়া করলেন র‌্যাব সদস্যদের জন্য।
লকাডাউনের ফলে গোটা মহল্লা ছিলো চুপচাপ। বাইরেও কেউ ছিলো না। এ সময়ে একটি কাভার্ডভ্যান এসে থামে। সেখান থেকে নামতে শুরু করে র‌্যাব সদস্যরা। এসময় প্রত্যেক র‌্যাব সদস্যের কাধে ছিলো বস্তা। এরপর তারা হাটতে শুরু করে মহল্লার গলিপথ ধরে। নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন বাড়িতে থাকে সে সমন্ধে আগে থেকেই ধারণা থাকায় তেমন অসুবিধা হয়নি তাদের। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে গেটে টোকা দেন আর গলা উঁচিয়ে বলেন, ‘কেউ আছেন। আমরা র‌্যাব-১১ থেকে এসেছি। আপনাদের জন্য খাদ্যপণ্য এনেছি’।
এরপর গেট খুলে একে একে বের হয় মানুষ। র‌্যাব সদস্যরা একটি করে বস্তা রাখেন আর এক পরিবারের একজন করে তা নিয়ে যায়। এসময় র‌্যাব সদস্যরা অনুরোধ করে বলেন, কেউ একাধিক বস্তা নিবেন না। আরেকজনের কিসমত মারবেন না।
র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিজ্ঞাসা করেন, কারো কোন দুধের বাচ্চা আছে কি-না। একজন নারী হ্যা বললে তাকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। যা দিয়ে কেনা হবে ছোট্ট শিশুর দুধ।
এভাবে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি, এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় যায় র‌্যাব-১১ সদস্যরা। আর ডেকে ডেকে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়।
আবুল হাসেম নামের এক গাড়ির হেলপার জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের একটি বাসে হেলপারের চাকরি করেন তিনি। রোজ হিসেবে আয়। গাড়ি চললে টাকা আর না চললে একেবারে ফাঁকা। লকডাউন ঘোষনার আগে থেকেই এ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে ঠায় বাসায় বসা হাসেম। তিনি বলেন, ধার দেনা করে কোন রকম সংসার চলছিলো। তবে র‌্যাবের খাদ্যপণ্য পেয়ে এখন কিছুটা চিন্তা মুক্ত তিনি।
জানা গেছে, প্রতি পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তার মধ্যে ছিলো চাল, ডাল, তেল, আলু, লবন, পেঁয়াজ, আদা-রসুনমহ আরও কয়েকটি পণ্য।
র‌্যাব- ১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, লকডাউনের ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছে। তাদের জন্য আমাদের খাদ্য সহায়তা। দিনের বেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই রাতের সময়টা বেছে নিয়েছি মহৎ এ কাজের জন্য।

ভিডিও দেখুনঃ